জলের অপর
নাম যে জীবন, এটা
আমরা সবাই জানি।
জল
পান করা নিঃসন্দেহে আমাদের
শরীরের জন্য খুবই ভালো। জল
শুধু আমাদের তেষ্টা মেটায়
না, সেই সঙ্গে শরীরে
জলের মাত্রা ঠিক রাখে,
খিদে কমায় এবং অতিরিক্ত
ক্যালরি বার্ন করে ফেলতেও
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
থাকে। কিছু
কিছু সময় জল খাওয়া
মাত্র একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে। যেমন
ধরুন খাওয়ার সময় জালপান
একেবারেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়।
এমনটা করলে হজমে সহায়ক
এনজাইম এবং অ্যাসিডগুলির কর্মক্ষমতা
কমে যায়। ফলে
খাবার হজম হতে সমস্যা
হয়। দেখা
দেয় বদহজমের মতো সমস্যা।
এখানেই শেষ নয়, ভুল
সময় জল খেলে শরীরের
আরও নানা ধরনের ক্ষতি
হতে পারে। সারাদিনে একজন সুস্থ মানুষের
২-৩ লিটারের বেশি পানি পান
করা উচিত নয়।
এর চেয়ে বেশি পানি
পান করলে তা কিডনি
ওপরে অতিরিক্ত চাপ ফেলে দেয়। আর
পানি পান করা ভালো
হলেও খেতে বসে খুব
বেশি পানি পান করা
স্বাস্থ্যের জন্য কোনো দিক
দিয়েই ভালো নয়।
পরিমিত ও পর্যাপ্ত
পানি পানে কিডনি, যকৃৎ,
হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্ক ভালো
থাকে। শরীরে
রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। পানি
শরীরের ভেতরের কোষগুলোকে সবল
ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। পানি
পানের ঘাটতি দেখা দিলে
এই কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে
অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পানের বিষয়ে
সচেতন থাকতে হবে।
কেননা পান করার পানি
বিশুদ্ধ না হলে ডায়রিয়া,
কলেরা ও টাইফয়েডের মতো
পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার
আশঙ্কা থাকে। কমপক্ষে
আধঘণ্টা ভালো করে ফুটিয়ে
তারপর ঠান্ডা করার মধ্য
দিয়ে পানি জীবাণুমুক্ত হতে
পারে। অথবা
সঠিক পদ্ধতিতে ফিল্টার করেও পানি পান
করা যেতে পারে।
এ ছাড়া বাজার থেকে
বোতলজাত পানি কেনার ক্ষেত্রেও
সেগুলো দেখে শুনে কেনা
উচিত। প্রবন্ধটি
পড়ে জেনে নিন জল পারেন উপকারিতা, কোন
কোন সময় জাল পান
করা উচিত, আর কোন
কোন সময় নয়।
জল পানের উপকারিতা ঃ
১) খালি পেটে জল খেলে বাওয়েল মুভমেন্ট ভাল হয়
এবং সহজে পেট পরিষ্কার হয়।
২) সারা
রাত ধরে যে রেচন পদার্থগুলি বা টক্সিনগুলি কিডনিতে জমা হয়, সকালে খালি পেটে জল খেলে সেই
টক্সিনগুলি মলমূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
৩) সকালে
খালি পেটে জল খিদে বাড়ায়।
৪) ঘুম
থেকে উঠে অনেকের মাথাব্যথা করে। শরীরে জলের মাত্রা কমে যাওয়া মাথাব্যথার অন্যতম
কারণ। সারা রাত শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল যায় না। তাই সকালে উঠে যদি খালি পেটে
অনেকটা পরিমাণ জল খাওয়া যায় তবে মাথার যন্ত্রণা দূর হয়।
৫) খালি
পেটে জল খাওয়ার ফলে যেহেতু বাওয়েল মুভমেন্ট ভাল হয় তাই কোলনও পরিষ্কার হয়।
৬) সকালে
খালি পেটে জল খেলে হজমশক্তিও বাড়ে।
৭) যাঁরা
ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমাতে চান, তাঁরা অবশ্যই এই অভ্যাসটি বজায় রাখবেন কারণ যত বেশি জল খাবেন
তত হজম ভাল হবে এবং শরীরে বাড়তি ফ্যাট জমবে না।
৮) ঘুমের
ক্লান্তি কাটিয়ে শরীরে নতুন এনার্জির সঞ্চার হয়।
৯) শরীর
থেকে যত টক্সিন দূর হবে ততই ত্বক উজ্জ্বল হবে। সবচেয়ে বেশি টক্সিন জমে রাতে, ঘুমোনোর সময়ে। তাই নিয়মিত সকালে
খালি পেটে জল খেয়ে শরীর থেকে টক্সিন দূর করলে ত্বক উজ্জ্বল হবে।
১০) খালি
পেটে জল খেলে তা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কখন জলপান করা উচিত নয় ঃ
১. তেষ্টা না পেলে জল পান নয়:
শরীর ঠিক রাখতে
পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খাওয়া একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু মাত্রতিরিক্ত পরিমাণে জল খেলে
শরীরে নুনের ভারসাম্য বিগড়ে গিয়ে নানা ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
২. শরীরচর্চার করার পরে সঙ্গে সঙ্গে জল পান করবেন না:
হালকা এক্সারসাইজের
পর অল্প করে জল খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ইনটেন্স ওয়ার্কআউটের পর জল পান একেবারেই
উচিত নয়। আসলে শরীরচর্চা করার সময় ঘামের সঙ্গে অনেক পরিমাণে মিনারেল বেরিয়ে যায়।
তাই এই ঘাটতি মেটাতেশরীরচর্চার পর ডাবের জল অথবা অন্য়ান্য় এনার্জি ড্রিঙ্ক খাওয়া
উচিত, জল একেবারেই নয়। প্রসঙ্গত, এই সময় জল খেলে
শরীরের অনেক ক্ষতি হয় কিন্তু।
৩. ফ্লেবারের জল খাওয়া একেবারেই উচিত নয়:
বিভিন্ন ফ্লেবারের
জল খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এমনটা করলে তেষ্টা মেটার সঙ্গে সঙ্গে খিদেও বেড়ে যায়।
তাই তো সব সময় সাধরণ জল পান করাই ভাল। প্রসঙ্গত, এইসব ফ্লেবার জলে
ক্যালরির মাত্রা খুব বেশি থাকে। আর বেশি মাত্রায় ক্যালরি যে শরীরের পক্ষে ভাল নয়, তা তো সবাই জানা। তাই না!
৪. ভারি খাবার খাওয়া পরে জল নয়:
ভারি খাবার, যেমন ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ অথবা ডিনারের
আগে জল খেতে পারেন, কিন্তু পরে একবারেই নয়। আর যেমনটা আগেই বলেছি, খেতে খেতে জল খাওয়া তো একবারেই চলবে না। প্রসঙ্গত, খাবার খাওয়ার আগে অল্প করে জল পান চলতে পারে,বেশি করে খেলে কিন্তু খাবার খেতে পারবেন না। সেই সঙ্গে শরীর
অস্বস্তি করার মতো লক্ষণও দেখা যেতে পারে।
খালি পেটে পানি পানের সুফলঃ
প্রথমত, এই অভ্যাস মলাশয়কে ঠিকঠাক ও সচল রাখতে সাহায্য করে।
পরিপাক ক্রিয়া থেকে সঠিকভাবে নানা পুষ্টি উপাদান গ্রহণে শরীরকে সাহায্য করে। ভাল
হজমশক্তি আপনা থেকেই অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে আসে।
দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত পানি ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর রাখে। রক্ত থেকে টক্সিন ও বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান দূর করতে পানি সাহায্য করে। এ ছাড়াও নতুন রক্তকোষ এবং মাসল সেল জন্মানোর প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে পানি । ওজন কমিয়ে রাখতেও পর্যপ্ত পরিমাণে পানি পান খুবই উপকারী ।
কখন জল পান করা উত্তম ঃ
দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত পানি ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর রাখে। রক্ত থেকে টক্সিন ও বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান দূর করতে পানি সাহায্য করে। এ ছাড়াও নতুন রক্তকোষ এবং মাসল সেল জন্মানোর প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে পানি । ওজন কমিয়ে রাখতেও পর্যপ্ত পরিমাণে পানি পান খুবই উপকারী ।
কখন জল পান করা উত্তম ঃ
১. ঘুম থেকে উঠেই ১৬০ মিলি লিটারের গ্লাসের ৪ গ্লাস পানি পান করবেন।
২. পানি পানের ৪৫ মিনিটের মধ্যে কোনও খাবার খাবেন না।
৩. ৪৫ মিনিট পর নাস্তা করবেন এবং পানি পান করবেন।
৪. নাস্তা করার ১৫ মিনিট পর, দুপুরে এবং রাতের খাবারের ২ ঘন্টার ভিতরে কোনও খাবার বা পানি পান করবেননা।
৫. যারা বয়ষ্ক বা অসুস্থ এবং ৪ গ্লাস পানি পান করতে অক্ষম প্রথম দিকে অল্প অল্প করে পানি পানের অভ্যাস করবেন। এরপর ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে চেষ্টা করবেন।
৬. উপরের চিকিৎসা পদ্ধতিটি উল্লেখিত রোগ বা অসুখসমূহের নিরাময় করবে এবং যাদের এসব নেই তারাও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন।
জল পান সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ভিডীওটি দেখুন
জেনে নিন পানি পানের সঠিক সময় ও নিয়ম এবং পানি পানের উপকারিতা
Reviewed by The Bong Media
on
December 27, 2018
Rating:
No comments: